আকাশমুখী আট
আকাশমুখী আট
মিম
ও রাজীবের প্রতি শোক
ও হাজারো শিক্ষার্থীর প্রতিবাদের অনুপ্রেরণায় ও অমর শহীদদের স্মৃতিতে।
ও হাজারো শিক্ষার্থীর প্রতিবাদের অনুপ্রেরণায় ও অমর শহীদদের স্মৃতিতে।
"আবার
কি হলো তোর?" শাড়ি পড়া, লম্বা-বেণীর কনুইয়ে খোঁচা দিয়ে জানতে চায় হাফ-হাতা শার্ট।
"তোদের
কি কান বন্ধ নাকি রে? শুনতে পাস না, চোর-ডাকাত-দস্যুদের গলা? কেমন গর্ব ভরে ভাষণ দিচ্ছে। ছ্যাঁ ছ্যাঁ..", লম্বা বেণীর জবাব।
"আস্তে,
পাগলি। শুনতে পায় যদি, রাজা-মন্ত্রীদের নিয়ে এমন উচ্চবাচ্য করিস কথায় কথায়। এজন্যই তো এমন বন্দী
হয়ে আছিস", কলার-ওয়ালা পাঞ্জাবি নড়েচড়ে বলে উঠে।
- "কানটা
ঝালাপালা করে দিল যে! আর থাকতে ইচ্ছা
হয় না এখানে। পালিয়ে
যাই না, চল?"
"কিন্তু
যখন হাজারো তরুণ-তরুণীর কণ্ঠে ঝড় উঠে, যখন
মশাল নিয়ে ওরা আমাদের ঘিরে জ্বলে উঠে, তখন তো পালানোর কথা
চিন্তা করিস না", মুচকি হেসে জবাব দেয় ইন-করা শার্ট।
সবার
চোখে ভেসে উঠে সেই জ্বলে উঠা দিনগুলোর কথা।
শ্রাবণের
কোনো এক বৃষ্টিস্নাত দুপুরের
কথা মনে পড়ে। লম্বা-বেণী জিজ্ঞেস করেছিল, কলার-ওয়ালা পাঞ্জাবিকে, "আচ্ছা, দেখ তো, আমার হাতের ব্যানারে কি লেখা?" লিখাটা
পড়ে মুখ নিচু করে কলার-ওয়ালা পাঞ্জাবি জবাব দিয়েছিল, "যৌন নিপীড়ক ছাত্রনেতাদের বহিষ্কার চাই।"
মুখ
শক্ত হয়ে যায় লম্বা বেণীর। কি লজ্জা! কি
লজ্জা! নিস্তব্ধ হয়ে যায় ওরা আটজন। হাতে হাত ধরে রাখা, ওরা আটজন। কি লজ্জা!
আবার
কোনো এক রোদ ঝলমলে,
ব্যস্ত, কোলাহল দিনের কথা মনে পড়ে ওদের। যেদিন রোদের ঝিলিক ছুঁতে পারেনি ওদের চোখ। কারণ কালো কাপড়ে বাঁধা ছিল আটটি মুখ। অধিকার আদায়ের দাবিতে ওদের ঘিরে থাকা ছাত্র-ছাত্রীরা, ওদের চোখ বেঁধে দিয়েছিল।
"আমার
বেশ খুশি লাগছে। অন্যায়-অবিচার-শোষণ দেখার পর চোখটা একটু
নিস্তার পেল", বলেছিল আকাশমুখী মখটা।
"বেশ
তো কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়েছে চোখ। আমি এখন কি দেখতে পাচ্ছি
জানিস?
'এখানে
ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্নে শান্তি আসে মানুষের মনে,
এখানে
সবুজ শাখা আকাবাকা হলুদ পাখিরে রাখে ঢেকে;' ...", আবৃত্তি-মাখা কণ্ঠটা বলেছিল। ইন-করা শার্ট
বলে উঠেছিল, "জীবনানন্দ না?"
মাথা
নাড়ে আবৃত্তি-মাখা কণ্ঠ।
"রাজুর
কথা মনে পড়ে গেলো। ওই যে জীবনানন্দের
বুলি আওড়াতো যে ছেলেটা...", আকাশমুখী বলেছিল,
ভার হয়ে আসা গলায়।
তার
জন্যই তো আমাদের জন্ম
হলো। রাজু। তোরা জানিস, ওর শহীদ হবার
পর ব্যাগে পেয়েছিল কিছু রং-তুলি আর
কবিতার খাতা?" কলার-ওয়ালা পাঞ্জাবি বলে উঠেছিল।
স্মৃতিতে
ভাসতে ভাসতে দিন পার করে দেয় ওরা আটজন। আবার সকাল আসে। কোনোদিন সি.এন.জি.'র হর্ণ, রিকশার
বেল বাজিয়ে সকাল আসে। কোনোদিন অ্যাম্বুলেন্সের ত্রাস ছড়ানো শব্দ নিয়ে। ওরা খুব একটা সাড়া দেয় না।
একদিনকে
ওরা আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠে, কিছু তাজা প্রাণের হইচইয়ে। আর্তনাদের শব্দ বের হয়ে আসতে চায়, লম্বা-বেণীর কণ্ঠ থেকে। ওদের কংক্রিটের হাত-পা ছুটে এসে
থামাতে চায়, রাজ্যের কোটালদের। সেই কোটালদের, যাদের রক্ত-মাংসের শরীরের ভেতরে ঢাকা আছে, কংক্রিটের শক্ত মন। কংক্রিট-মনের দানবগুলো তখন পিষে ফেলতে চাচ্ছিলো ন্যায়কে, সত্যকে, দুর্বার সাহসকে, স্বাধীনতাকে। কিছু গর্জে উঠা প্রাণের বিপরীতে ওরা ছুঁড়েছিল বুলেটের গর্জন।
তারপর,
নিস্তব্ধতা।
আটটি
মূর্তি সরে এসে জায়গা করে দেয়, ওদের ভাস্কর্যটার মাঝখানে। আরেকটি সবুজ শার্টের জন্য। যার বুকে তখনো তাজা লাল রক্ত, যার অন্তরে নেই কোনো কংক্রিটের দানা।
পরদিন
আবার সকাল হয়। কংক্রিটের ভাস্কর্যের পাশ দিয়ে ঝাড়ু দিতে থাকে নগরকর্মীরা। হয়তো তারা ঝাড়ু দেয় সেই বুলেটগুলোকে।
আর
দূরে কোনো তরুণের খাতায়, কোনো তরুণীর ব্যানারে, আর এই কংক্রিটের
নিচে চাপা পড়া অমরদের মনে - আবার নতুন স্বপ্ন জাগে। শক্ত মুঠোয় মুঠো ধরে রাখা আকাশমুখী স্বপ্ন।
6th August, 2018
(ছবি ইন্টারনেট থেকে )
Comments
Post a Comment