মৈত্রদার স্মরণে

 


সমুদ্রের তীরে একটা প্রবালের উপর দাঁড়িয়ে সূর্যকে বিদায় জানাচ্ছি। ঢেউগুলো ক্রমশ উঁচু হচ্ছে। পেছনে ফিরে দেখি, যে প্রবালগুলো পাড়ি দিয়ে এখানে পৌঁছেছি, তা ক্রমশ পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এখনই না ফিরলে বেশ কঠিন লাগবে পা ফেলতে। হঠাৎ মনে পড়ল "অলৌকিক জলযান" এর মৈত্রদার কথা। মৈত্র জাহাজের বড় টিন্ডাল। ছোট্ট সংসার ভারতবর্ষের গ্রামে। বছরের আট-দশ মাসই কাটে জাহাজে। মৈত্রদার চরিত্র ঠিক সাদা নয়, কালোও নয়, বরঞ্চ  আর দশটা জাহাজি বা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মতোই ধূসর। ‌সে ভুল করে, পরিতাপ করে, আবারও ভুল করে। জাহাজ তখন অস্ট্রেলিয়ার কোনো একটা দ্বীপে বিরতি নেয়। ছিমছাম ছবির মত একটা দ্বীপ। দুদিনের ছুটি পেয়ে জাহাজিরা বিশ্রাম নিচ্ছে। মৈত্রদা সমুদ্রতীরে এক কোনায় গিয়ে এমনি একটা পাথরের উপর বসে থাকে। ছিমছাম দ্বীপের মানুষগুলো ভাটার এই সময়টা দোকানপাট সব গুটিয়ে চলে আসে দ্বীপের অনেকটা ভিতরে। কিন্তু মৈত্রদা ফেরে না। সমুদ্রের প্রবল স্রোতের কাছে মুক্তি খোঁজে। আর দশটা মানুষের মত ঘর যেভাবে টানতো তাকে, একদিন সংসার আর সে ভাবে পারেনি টানতে। মৈত্রদা ফেরেনি, অথবা ফিরে গেছে সমুদ্রের কাছে।

সাদা নয় কালো নয় ধূসর মনের মানুষটার জন্য মন খারাপ হয়ে গেল গোধূলি বেলায়।

Comments

Popular Posts