A timeless, melodic movie

 সিনেমা: আবহমান

পরিচালক: ঋতুপর্ণ ঘোষ


ঋতুপর্ণর সবচেয়ে আর্টিস্ট কাজগুলোর একটি এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় মুভি আবহমান। খুবই ক্ল্যাসিক, টাইমলেস একটি গল্পের উপরে মুভিটি নির্মিত। তাই মুভির নামটাও জুতসই- আবহমান। 


স্ক্রিনের খুবই প্রিয় একটি জুটি মমতার শংকর ও দীপঙ্কর দে। তাদেরকে আমরা পরিচালক ও পরিচালকের সহধর্মিনী রূপে দেখি। অনিকেত মজুমদার পরিচালনা করেন আর্ট ফিল্ম। তার মুভির প্রদর্শনীতে দর্শকের চেয়ে জার্নালিস্ট আসে বেশি। দীপ্তি তারই ছবিতে কাজ করতে যায়। সিনেমায় নাম লেখাতে শ্রীমতি নামটা তাকে দেন পরিচালক। তারপর শ্রীমতির আর নায়িকা হিসেবে কাজ করা হয়নি পরিচালকের সাথে। বরং তারা জুটি বাঁধে সংসারে। একরকম সফল দম্পতি তারা। একমাত্র সন্তান অপ্রতীম তথা অপু। 






অন্যদিকে শিখা কামিং অফ অ্যাক্ট্রেস। জড়িয়ে পড়ে এই পরিবারের সাথে। একসাথে বেশ কিছু কাজ হয়। এবং অনিকেত মজুমদারকে আমরা দেখি একই সাথে শিখা ও তার স্ত্রী দীপ্তি যাকে সে শ্রীমতি বলে সম্বোধন করে, দুজনের উপরই সে অনুরক্ত হয়ে যায়। এজন্যই বলছিলাম গল্পটা ক্লাসিকাল। একসঙ্গে কাজ করতে করতে, একটা সৃষ্টির আনন্দ খুঁড়তে খুঁজতে একে অন্যের উপর অনুরক্ত হয়ে যাওয়া। দুজন মানুষের মাঝে একি সত্তার একটা উপস্থিতি পাওয়া। প্রেমটা হয়তো সম্পূর্ণ রিজনেবল নয়, আর এই জায়গায় গল্পটা জীবনের সাথে মিশে গেছে, কারণ জীবনটাও আনরিজনেবল। আর আবহমান গল্পটাকে ঋতুপর্ণ উপস্থাপন করেছেন ইউনিক আর্ট ফ্লেভারে। ইউ জাস্ট হ্যাভ টু ওয়াচ ইট! একটা দৃশ্য থেকে পরের দৃশ্যে আবর্তন—জাস্ট মাইন্ডব্লোয়িং। আমার কাছে ঋতুপর্ণর সেরা কাজ। 








মুভির অন্যতম একটা জায়গা জুড়ে ছিল বাবা ছেলের সম্পর্ক। যখন একটা সন্তান পৃথিবীতে আসে, তখন তার বাবা মা তাদের পূর্ণ যৌবনে, লিভিং দিয়ার লাইভ। এবং যখন সেই সন্তানটি অ্যাডাল্ট হয়, সে যেন বাবা-মার জীবনীশক্তি টা একটু একটু করে নিয়ে সমর্থ হয়। এবং পিতা-পুত্র রোলটা রিভার্সাল হয়ে যায়। এটা এত চমৎকার করে দেখিয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ! আর সিনগুলোর মাঝে আর্ট খেলা করছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বলো, গানের একটা সুর বলো, মনে হচ্ছে দৃশ্যগুলো থেকে আলাদা করা যাচ্ছে না। 







মুভির সবচেয়ে প্রিয় দৃশ্যটা- ক্লাইমেক্স টা খানিকটা পার হয়ে যাওয়ার পর, অনন্যা চ্যাটার্জী ও যীশুর একটা কথোপকথন। বারবার দেখা। কিন্তু ওইখানে অনন্যা চ্যাটার্জির অভিনয়টা, কিংবা যীশুর হাসিটা আরেকবার অনায়াসে দেখা যায়। এখনো আমার কানে বাজছে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকটা। 







মমতা শংকর ও দীপঙ্কর তে অসাধারণ জুটি বেঁধেছেন মুভিটাতে। আর অনন্যা চ্যাটার্জি ও যিশু সেনগুপ্তের অভিনয়ও মুগ্ধ করার মত। 


বাংলা একটা বই পড়লে, বা বাংলায় একটা সিনেমা দেখলে, যেরকম আরাম পাই সেটা অন্য কোথাও পাই না। এই মুভিগুলো যখন দেখি, মনে হয় একটা গ্রেট মাইন্ডের সাথে কানেক্ট করছি, একটা কমন কালচার শেয়ার করছি আমরা। তাই এই মুভিগুলোকে রেটিং করতে পারি নি। দিয়েছি প্রিয় মুভির স্থান। বছরখানেক পার হয়ে গেল আবহমান দেখার, আর এখনো একই স্থানে রয়েছে। 


আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কেমন লেগেছে মুভিটা দেখে, আমি বলব, অপ্রতীম। তুলনারোহিত।


Comments

Popular Posts