Unishe April- a mother daughter duo to remember
উনিশে এপ্রিল (১৯৯৪)
পরিচালনায়- ঋতুপর্ণ ঘোষ
অভিনয়ে- অপর্ণা সেন, দেবশ্রী রায়, দীপঙ্কর দে, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী
একজন মিডিওকর ব্যক্তি, আর আরেকজন, যে মনে প্রাণে শিল্পী তাদের মধ্যে সহবস্থানটা খুব সহজ নয়।
মা ও মেয়ের দারুন ডুও। উনিশে এপ্রিল একটা বিশেষ দিন, যেমন মায়ের জন্য তেমনি মেয়ের জন্যও। প্রায় একদিনের গণ্ডিতেই সম্পূর্ণ মুভিটা। সকালবেলা একটা ফোন কল আসে—সংগীত নাট্য একাডেমী থেকে একটা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন নৃত্যশিল্পী, যিনি এই গল্পে মায়ের ভূমিকায়। তারপর বাসায় সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার আসতে থাকে। একটু একটু করে কাহিনী গড়ায়।
মা, মেয়ের প্রসঙ্গে আসি। মেয়ে ঠিক সেই বয়সটাতে, যেটা মা পার করে এসেছে। আর দশটা মা-মেয়ের থেকে একটু আলাদা সম্পর্ক তাদের। ছোটবেলায় বাবার কাছেই বেড়ে ওঠা। বাবার ন্যাওটা। এবং মায়ের জায়গাটা তার কাছে অপরিষ্কার। কেন সে মায়ের ভূমিকায় আরো বেশি ছিল না। 'চেষ্টা করলে বাবার সাথে মানিয়ে নেয়া যায় নাকি এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না মা।'
সংসারের জন্য যদি ক্যারিয়ার ছেড়ে দিতে হয় তাহলে কি করতে অদিতি? মায়ের এমন প্রশ্নে তার জবাব—'তোমার জায়গায় আমি হলে আমি ঠিক ছেড়ে দিতাম।'
সিনেমাটা যখন প্রথম দেখি টিভিতে, তখন দশের নিচে ছিল বয়স। সিনেমাতে তথাকথিত নায়ক বা নায়িকা আইডেন্টিফাই করতে পারলেই তখন যথেষ্ট মনে হতো। এই সিনেমাটা একটু ভিন্ন লেগেছিল কারণ নায়ক-নায়িকা বা নাচ গান কোনটাই নেই। পরে আমার ঋতুপর্ণর মুভি নিয়ে অবসেশন হয় তখন বয়স কুড়ির উপরে। উনিশে এপ্রিল দেখি। তারপর আবার দেখি। তারপর আবার।
অদিতির জায়গাটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। কারণ সেই জায়গাটা আমি ক্রস করে এসেছি। কিন্তু বারবার দেখতে দেখতে মা-মেয়ে দুজনের জায়গাটায় বুঝতে পারি।
একজন প্রফেশনাল নারী হতে একজনকে যা স্যাক্রিফাইস করতে হয়, সাথে সে যদি শিল্পী হয় তাহলে তার স্যাক্রিফাইস এর জায়গাটা আরো বড়। সমাজ এখনো নারীর সাফল্য কে অভিনন্দন করতে শেখেনি। কর্মক্ষেত্রে বা একটা সামাজিক আড্ডায়— বাসায় কিভাবে রান্না হয়, বাসায় বুয়া আছে কিনা, এরকম প্রশ্ন শুনিনি এমন মেয়ের সংখ্যা কম। একটা মেয়েও তো একটা ছেলের মত বাঁচতে চাইতে পারে। বা একটা ছেলেও তো একটা মেয়ের মত বাঁচতে চাইতে পারে। রান্নাঘরটা নারী বা পুরুষের জায়গা নেই এখন আর। বরং যার রান্না করতে ভালো লাগে আর যার করতে ভালো লাগেনা—এভাবেই ভাগ হয়ে গেছে।
সংসার বাই ডিফল্ট নারীদের উপর একটা জব। আর সেটাও আনপেইড। এখানে প্রমোশন মানে আরো বেশি খাটা এবং আরো বেশি আনপেইড থাকা।
অপর্ণা সেনকে আমরা দেখি নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায়। তিনি ড্রয়িং রুমে আসছেন হেঁটে হেঁটে, বলবো তিনি মার্চ করে আসছেন। তার হাঁটায় ছন্দ আছে, তাল আছে, তিনি ঘরে প্রবেশ করলে, কোন কাজ বাদ দিয়ে তার দিকে চোখ চলে যায়। কথাবার্তায় কোনো তোষামোদের ভাব নেই। চা খাবেন? না খেলে নেই, কোনো জোড়াজোড়ি নেই। আর চারটে মা-মাসির মত নন। আর সোফার বিপরীতে বসা ভদ্রলোককে আলাদা খাতির বা রেস্পেক্ট কোনোটাই করলেন না।
অদিতি, তার ডাক্তার মেয়েটির কাছে, মায়ের এসব আচরণই একটু বাড়াবাড়ি। মা ক্যারিয়ার গড়ছে, দেরি করে বাড়ি ফিরছে, জন্মদিনে কেক বানিয়ে দিচ্ছে না, এসব ছোটবেলা থেকে মেয়েটার উপরে ইম্প্যাক্ট ফেলতে থাকে। কিন্তু একই কাজগুলো তো আর দশটা বাবাও করেন না। মজার বিষয় হল—বাবাদের কাছে আমাদের এই এক্সপেক্টেশনগুলোই থাকে না।
ঋতুপর্ণর দ্বিতীয় মুভি এটি। নির্মাণশৈলী অপূর্ব। তার পরবর্তী মুভিগুলোর জন্য একটা বার সেট করেছে এই মুভিটা। দর্শক হলে আসার আগে এক্সপেক্ট করে রাখতে পারে কি কি দেখা যাবে পর্দায়।
অপর্ণা সেনকে অসাধারণ লেগেছে। কথা বলার ভঙ্গিমা, হাঁটার ছন্দ—এটার তুলনা চলে মহাভারতে দ্রৌপদীর বর্ণনার সাথে। দারুন লেগেছে মুভির ইন্টেরিয়রটা। ক্ল্যাসিক ঋতুপর্ণ!
উনিশে এপ্রিল আসতে থাকবে ক্যালেন্ডারের পাতায়। পুরনো হয়ে যাবে, কিন্তু আরেকবার দেখার আবেদন বাড়বে বই কি।
Comments
Post a Comment