ঝিলাম নদীর দেশ

 বই লেখক: বুলবুল সরওয়ার




এক অলস বিকেলে আড্ডা দিতে দিতে, যারপর-নাই-তার বইয়ের রিকমেন্ডেশন চালাচালি হল নাফিসের সাথে। চালাচালি বললে ভুল হবে, একগাদা বই আমিই রিকমেন্ড করলাম, তার বদলে নাফিস আমাকে ছোট্ট একটা বই রিকমেন্ড করল। ঝিলাম নদীর দেশ।


ছোট্ট বইটা দ্রুতই খুঁজে পেলাম অনলাইনে, আর অর্ডার করলাম। হাতে পেয়ে খুব খুশি, ছোট্ট হার্ডকভার—যেকোনো ব্যাগের মধ্যে অনায়াসে ঢুকিয়ে ফেলা যাবে। কিছু বই থাকে যেগুলো হাতে নিয়ে ধরলেই অর্ধেক ভালো লাগা চলে আসে, সেরকম। কয়েক পাতায় চোখ বুলিয়ে মনে হল, লেখাটা ভালো না হয়ে যাবে না। ভাবলাম এটা জমিয়ে রাখি, ছুটি কাটাতে গিয়ে বেশ জমবে। একবার ভাবলাম কাশ্মীরের জমিনে বসে এই বইটা পড়লে কেমন হয়। তারপর যা হয়, একটা ভালো বই আর কয়দিন জমিয়ে রাখা যায়, নিজেকে অজুহাত দিলাম এই যে—একটা সুন্দর জায়গায় গেলে তো এমনিই ভালো লাগবে, কর্মব্যস্ত সপ্তাহান্তে একটু চিল করা আবশ্যক।


শুরুতেই লেখক জেএন্ডকে ট্যুরিজমের বাসে করে কাশ্মীরে পৌঁছানোর বৃত্তান্ত দেন। প্রথম দর্শন, প্রথম ভালোলাগা, অপরিসীম সুন্দর‌ এই ভূখণ্ডের মোহ লেখককে গ্রাস করার সময়, খানিকটা বিষাদও ছুঁয়ে দেয়। এ যেন অনেকটা রূপকথার গল্পের মত—ভীষণ সুন্দর রাজকন্যা কিন্তু কি জানি একটা অসুখ তাকে ঘিরে রেখেছে।


প্রত্যেকটা দৃশ্যের বিবরণী মনে হচ্ছিল চোখের সামনে ভাসছে। হু ঠিক, মহাত্মা গান্ধী পার্ক পেরিয়ে গুলমার্গের রাস্তা, আর পাম্পোর দিয়ে যেতে হয় পেহেলগাম। আমার কেন জানি ঝিলাম নদীটা খুব বেশি মনে নেই, তবে লিডার নদী চোখ বুজলে স্পষ্ট দেখতে পাই। পুরো পেহেলগামে সব জায়গায় মনে হয় লিডার নদী দেখতে পাওয়া যায়। আমি যখন বুলবুল সরওয়ারের লেখায় দ্বিতীয়বার কাশ্মীর ভ্রমণ করছি, অনেক ইতিহাস জানলাম প্রথমবারের মতো। ভ্রমণ কাহিনীটা সমৃদ্ধ হয়েছে তার এই ইতিহাসের বিবরণী ও আশেপাশে লোকালদের সাথে আড্ডা গুলো নিয়ে। ইতিহাসের গল্পে বেশি উঠে এসেছে কাশ্মীরের প্রথম দিকের কবি লাল দেদ, হাব্বা খাতুন ও মুঘল সাম্রাজ্যের স্থাপনা। বাংলাদেশী ও বাঙালি মুসলিম হিসেবে ভারত ভ্রমণের নানা রকম অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন লেখক।


লেখার টানে বারবার মুজতবা আলীর একটা ফ্লেভার পাচ্ছিলাম। তবে পার্থক্য এখানেই যে—মুজতবা আলী তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ম্যাচুউরড স্টাইলে। ধর্ম, কালচার এসব নিয়ে মানুষের দ্বিমত থাকতেই পারে। মুজতবা আলী একজন মাতালের সাথে আড্ডা দিলে, আড্ডাটাই গল্পের মুখ্য থাকে। মদ্যপান নিয়ে তার পার্সোনাল কি মতামত, সেটা লিখে তিনি গল্প জটিল করেন না। বা পাঠককে চিন্তায় ফেলে দেন না। এই কমফোর্টটা কিছুটা মিস করেছি বুলবুল সরওয়ারের লেখায়।


অফিসের প্রতিদিন কোনো না কোনো কলিগ জিজ্ঞেস করে, হোয়াটস ইয়োর প্ল্যান। আমি আমতা আমতা করে বলি, না কোন প্ল্যান নেই, এইতো চলতেছে। মুখ ফুটে বলতে পারিনা—প্ল্যান হলো, যে কাজটা করছি সেটা এনজয় করা, আর সময় পেলে ঘুরে বেড়ানো। উইকেন্ডে বই পড়ি আর ট্রাভেল ভিডিও দেখি। একদিন ইউটিউবে একটা গ্রামের ভিডিও দেখলাম—চারপাশে গাছ-গাছালি, পাহাড়, ফুল। ঠিক করলাম এখনই যেতে হবে ওই দেশে। সমুদ্র আর আমি রাত একটায় শেয়ারট্রিপে ফ্লাইট প্রাইস দেখলাম। এক মাস চলল সেই ক্রেইজ। আমরা বাকু যাচ্ছি। ট্রাভেলগ দেখা, ফ্লাইট প্রাইস দেখা। তারপর আরেক উইকেন্ডে আরেকটা জায়গা নিয়ে মাথা খারাপ করি। আমার এই উইকেন্ডে রোমান্টিক ফ্যান্টাসির সাথে ভালো একটা ভ্রমণের বই যোগ দিলে যা হয়—জম্পেশ!


আর হ্যাঁ, তৃতীয়বার কাশ্মীর যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করছি।


Comments

Popular Posts