পুতুল নাচের ইতিকথা রিভিউ
বই - পুতুল নাচের ইতিকথা
বই লেখক - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
২৫ সালের শুরু হল মানিকবাবুর এপিক উপন্যাসটি দিয়ে। কতবার নাম শুনেছি বইটার—পুতুল নাচের ইতিকথা, পরবো পরবো করে জমিয়ে রাখা। মাস ছয়েক আগে বইয়ের দোকানে দেখে কিনেও ফেললাম, কিন্তু পড়া শুরু হলো কই। এবার বই অবলম্বনে বানানো সিনেমার ট্রেইলার দেখে ভাবলাম, পড়ার এই সময়। সিনেমার কাস্ট দেখে মুগ্ধ, আর পড়ার সময় সেই অভিনেতাদেরই চরিত্রগুলোর জায়গায় কল্পনা করলাম।
শশী ডাক্তারি পাশ করে গ্রামে এসে রোগী দেখে। শশীর মধ্যে এক শহুরে, শিক্ষিত যুবককে দেখি—যে স্বতন্ত্রে বিশ্বাসী, প্র্যাকটিকাল বা বৈষয়িক ঠিকই, কিন্তু শিক্ষা তার ব্যক্তিত্বে এক নতুন স্তর যোগ করেছে। তাই গ্রাম্য জীবনে শশীর মন পুরোপুরি টেকে না। গ্রামে শশির মান-সম্মান অনেক, একমাত্র পাশ করা ডাক্তার, অসুখ-বিসুখে ভরসা, নানা কাজে পরামর্শদাতা। কিন্তু তার এই উঁচু মনের কথা ভাগাভাগি করার লোক কই। বাড়িতে তার অতি বৈষয়িক বাবার কর্তৃত্ব, চায়ের দোকানে একঘেয়ে এক সুরে গ্রাম্য আলাপ।
তারপর বাজারের সন্ন্যাসী, বাজার দর, একাল-সেকালের পার্থক্য, নারী হরণ, পূর্ণ তালুকদারের মেয়ের কলঙ্ক, বিদেশবাসী গাঁয়ের বড় চাকুরে সুজন দাস, এইসব আলোচনা। শশী কি এত উঁচুতে উঠিয়ে গিয়াছে যে এইসব গ্রাম্য প্রসঙ্গে তাহার মন বসিল না, শান্ত অবহেলার সঙ্গে নীরবে শুনিয়া গেল? তা তো নয়। শুধু আধখানা মন দিয়া সে ভাবিতেছিল, এতগুলি মানুষের মনে মনে কি আশ্চর্য মিল। কারো স্বাতন্ত্র্য নাই, মৌলিকতা নাই, মনের তারগুলি এক সুরে বাঁধা।
মানিক বাবুর এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো সমাজের ভিন্ন স্তরগুলোর একটা স্যাম্পল। এবং তাদের উপস্থাপনও দারুন। কুসুম—তার মন বোঝা মুশকিল, গ্রামের সরল মেয়ে মতি, রূপবতী সেনদিদি, প্রবীর রাজপুত্র সেজে আগমন কুমুদের, বনবিহারী ও জয়ার সংসার—পাঠকের বোরড হওয়ার কোন জায়গা রাখেনি মানিকবাবু। ২০০ পাতার নভেল যে কিভাবে শেষ হয়ে গেল, আর তার গতি যেন মানুষের জীবনের মতই—আনপ্রেডিক্টেবল।
Comments
Post a Comment